ইসলামি শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীতা।
ইসলামি শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীতা।

ইসলামি শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীতা।

ইসলামি শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীতা

মাওলানঃ শামীম আহমেদ আলোচক,বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন : সকল সৃষ্টির মধ্যে বিশেষভাবে মানুষকেই আল্লাহ তাআলা জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা দান করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন তার পার্থিব প্রয়োজন পূরণের উত্তম পন্থা আবিষ্কার করতে পারে তেমনি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি এবং আখিরাতের সফলতা-ব্যর্থতার জ্ঞানও ধারণ করতে পারে। ন্যায়-অন্যায়বোধ এবং আসমানী ইলমের উপযুক্ততার কারণেই মানুষের জন্য এসেছে হালাল-হারামের বিধান। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর এই যোগ্যতা নেই। তাদের জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণ তাদের সাথেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন শীত-গ্রীষ্মের প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য পশম, অন্ধকারে পথ দেখার জন্য চোখে বিশেষ শক্তি ইত্যাদি। তদ্রূপ প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যেই রয়েছে জীবন ধারণের জন্য সহজাত বোধ ও প্রবণতা। যার দ্বারা চালিত হয়ে তারা আত্মরক্ষা করে ও বংশ বিস্তার করে। কিন্তু এ পর্যন্তই। পশু-পাখির জীবন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্বভাবের গন্ডিতে বাধা। স্বভাবের বৃত্ত থেকে তাদের উত্তরণ ঘটে না। পক্ষান্তরে মানুষ শিক্ষা অর্জন করে এবং শিক্ষা দান করে। শিক্ষার মাধ্যমে অজানাকে জানার এবং জানা বিষয়কে কাজে লাগিয়ে অজানার সন্ধান করার যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে। তাই পৃথিবীর শাসন ও নিয়ন্ত্রণের ভার তাদের উপর অর্পিত।

ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। হেরা গুহায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সর্বপ্রথম যে ওহী নাযিল হয় তা হচ্ছে, ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিন্ড থেকে।’-সূরা আলাক : ১-২

আল্লাহ তাআলার আদেশে মানুষ যেমন লাভ করেছে জীবনের আলো তেমনি আল্লাহরই নিকট থেকে সে লাভ করেছে ইলমের নূর। ইলমের মাধ্যমে মানুষ নবজন্ম লাভ করে। আল্লাহর মারিফত যখন মানুষের মধ্যে আসে তখনই সে প্রকৃত মানুষ হয়।

শিক্ষাকে যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, শিক্ষা মৌলিকভাবে দুই প্রকার : জাগতিক শিক্ষা ও দ্বীনী শিক্ষা। মানুষের জাগতিক প্রয়োজন পূরণের উপযোগী জ্ঞান ও বিদ্যা হচ্ছে জাগতিক শিক্ষা। যেমন বিজ্ঞান, চিকিৎসা, গণিত ইত্যাদি। এই শিক্ষার মূল সূত্র অভিজ্ঞতা। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির জ্ঞান হচ্ছে দ্বীনী শিক্ষা। এই শিক্ষার মূল সূত্র ওহী।
জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দারুল আসবাব (উপকরণের জগত) বানিয়েছেন। এখানে মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রয়োজনগুলো পূরণের জন্য এবং অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য মানুষকে দান করা হয়েছে পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও জ্ঞান-বুদ্ধি। এগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য ইসলাম পূর্ণমাত্রায় গুরুত্ব দিয়েছে।

জাগতিক জ্ঞান অর্জনের হুকুম

এ প্রসঙ্গে ইমাম গাযালী রাহ.বলেন, অনুমোদিত জাগতিক জ্ঞান দুই ভাগে বিভক্ত : ১. যা চর্চা করা অপরিহার্য ২. যা চর্চা করা উত্তম।

প্রথমটি হচ্ছে ওই সব জ্ঞান যা জীবন যাপনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যেমন চিকিৎসা বিদ্যা। কেননা, স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য এই জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তদ্রূপ গণিত। কেননা, লেনদেন, মিরাছ বন্টন ইত্যাদি বিষয়ে তা প্রয়োজন। গোটা জনপদে যদি এই জ্ঞানের পারদর্শী কেউ না থাকে তাহলে সকলেই কষ্টে পতিত হবে। একইভাবে কৃষি, বয়ন, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদির মৌলিক পর্যায়ের জ্ঞানও অপরিহার্য।-ইহইয়াউ উলূমিদ দ্বীন ১/২৯-৩০

পক্ষান্তরে যা মানুষকে কুফর ও ইলহাদের দিকে টেনে নিয়ে যায় তা চর্চা করা হারাম। যেমন ইসলামবিরোধী প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, কুফরী সাহিত্য ইত্যাদি। তদ্রূপ অকল্যাণকর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় চর্চা করাও নিষেধ।

মোটকথা, পার্থিব জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও কাম্য। তাই জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানকে মৌলিকভাবে অনৈসলামিক মনে করার অবকাশ নেই। তবে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণের ফলে শিক্ষার উপাদান ও পরিবেশে নাস্তিকতা ও ধর্মহীনতার অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে। যা একটি মুসলিম দেশের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। সামান্য চিন্তা করলেই দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জনের ক্ষেত্রে এই সব দর্শন ও অনৈসলামিক পরিবেশের কোনো
এ প্রসঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, জাগতিক জ্ঞান ও কলাকৌশল অর্জন করার একটি খালিছ দ্বীনী দিকও রয়েছে। সেক্ষেত্রে তা দ্বীনী খিদমত হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষার যুগে মুসলমানদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সামরিক শক্তিতে সর্বোচ্চ পারদর্শিতা প্রয়োজন। কুরআন মজীদে মুসলমানদেরকে আদেশ করে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো শক্তি অর্জন কর …।’ -সূরা আনফাল : ৬০

অতএব ইসলামের খিদমতের জন্য আধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চার করা হলে সেটা আর দুনিয়াবী কাজ থাকে না, সম্পূর্ণরূপে ইসলামের খিদমত হিসেবে গণ্য হয়। তদ্রূপ দ্বীনের প্রচার-প্রসারের জন্য কম্পিউটার শিক্ষা এবং প্রকাশনার অত্যাধুনিক মাধ্যমগুলোর জ্ঞান অর্জন করার প্রয়োজন রয়েছে।

মোটকথা, খালিছ দ্বীনী খিদমতের জন্য বিভিন্ন জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। দ্বীনী খিদমতের উদ্দেশ্যে তা অর্জন করা হলে তা দ্বীনী কাজে পরিণত হয় এবং তাতে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত হয়।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এই প্রশ্নেরও উত্তর পাওয়া যায় যে, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় সওয়াব হয় কি না? যদি দ্বীনের খিদমতের উদ্দেশ্যে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় আত্মনিয়োগ করা হয় তবে যে এতে সওয়াব হবে তা তো বলাই বাহুল্য। পক্ষান্তরে হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন, পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের খিদমত, পরিবার-পরিজনের হক আদায়, সমাজসেবা ইত্যাদি উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জনের পিছনে কার্যকর থাকলে এতেও সওয়াব রয়েছে।

কিন্তু এই প্রেরণা তো তখনই সৃষ্টি হতে পারে যদি জাগতিক শিক্ষা অর্জনরত ছাত্রদের মধ্যে আল্লাহমুখিতা তৈরি করা হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক সত্য এই যে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন, সুনাম-সুখ্যাতি লাভ ইত্যাদি বিষয়কে এত ফলাও করে প্রচার করা হয় যে, শিক্ষার্থীদের মনে উপরোক্ত দ্বীনী চেতনা জাগ্রত হওয়ার সুযোগই হয় না। আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে এতটাই ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি; বরং অনেক ক্ষেত্রে ইসলাম-বিরোধী বানিয়ে রেখেছি যে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইসলামী চেতনা বিকশিত হওয়ার সুযোগই নেই। বলাবাহুল্য, এজন্য কিয়ামতের দিনে দায়িত্বশীলদের অবশ্যই জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

শাহাজান ইসলাম, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি:

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে উপ-নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধিকারের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষক থেকে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ড. বশির উদ্দিন । ১৩ই মার্চ বুধবার বিকাল ৫ টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান ভুইয়া, নির্বাচন কমিশনার হুমায়ূন কবির ও ইমদাদুল হক শরীফ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন ড. বশির উদ্দিন।

গত ৩১ জানুয়ারি,২০২৪ সালে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শিক্ষক ঐক্য (নীলদল)থেকে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ফায়েকুজ্জামান মিয়া। এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধিকারের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষক পরিষদের সাদ্দাম হোসেন।

অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ১ ফেব্রুয়ারী,২০২৪ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়য়ে কর্মরত না থাকায় শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের ২ নং ধারা অনুযায়ী সদস্য পদ হারানোর ফলে সাধারণ সম্পাদক পদ শূণ্য ঘোষিত হয়।

নির্বাচন কমিশনারের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ২০২৪ গত ০৫/০৩/২০২৪ একটি সাধারন সভায় শিক্ষকদের সর্বসম্মতিক্রমে (সাধারণ সম্পাদক পদ) উপ- নির্বাচন- ২০২৪ নিমিত্তে নির্বাচন কমিশন গঠন করে। নির্বাচন কমিশন গঠনতন্ত্র অনুসারে ০৬/০৩/২০২৪ তফসিল ঘোষণা করার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ থেকে ১২ মার্চ ২০২৪ এ কমিশনের নিকট উক্ত পদে ২টি মনোনয়ন পত্র দাখিল করা হয়। উল্লেখ্য যে, একজন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক (৮ এর জ), আর কোন প্রতিযোগী (একাধিক) প্রার্থী না থাকায় নিম্নলিখিত বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধিকার চেতনায় বিশ্বাসী (নীল দলের) প্রার্থীর মনোনয়ন বহাল থাকায় কমিশন তাঁকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করে। উক্ত ধারা অনুযায়ী যেহেতু সাধারন সম্পাদক পদে আর ভোট অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই, ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধিকার চেতনায় বিশ্বাসী (নীল দলের)’ প্রার্থী ড. বশির উদ্দিন কে সাধারন সম্পাদক পদে প্রাথমিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো।”

শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ড.বশির উদ্দিন বলেন, শিক্ষকদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি আদায়ের সংগ্রামে সবসময় সোচ্চার থাকবো,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে সকল শিক্ষককে সাথে নিয়ে প্রশাসনের জন্য প্রেসার গ্রুপ হয়ে নিরালসভাবে কাজ করে যাবো,সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ছড়িয়ে দিয়ে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্বমানের মডেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট থাকবো।

উল্লেখ্য যে, ১ বছর মেয়াদে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্বে ড. বশির উদ্দিন

র‌্যাবের চৌকস অভিযানে জীপসহ প্রায় ১১ হাজার ইয়াবার চালান আটক

জামালপুর হামলা পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে জেলার সানন্দবাড়ী তে থমথমে অবস্থা বিরাজমান।

error: আপনি নিউজ চুরি করার চেষ্টা করছেন। বিশেষ প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন ০১৭৬৭৪৪৪৩৩৩
%d